সুদি লেনদেনই অর্থনৈতিক মন্দার প্রধান কারণ: বসুন্ধরা ইসলামিক রিসার্চ সেন্টারে বিচারপতি তাকি উসমানি

সুদি লেনদেনই বিশ্ব জুড়ে অর্থনৈতিক মন্দার প্রধান কারণ। সুদমুক্ত লেনদেনে কখনও এ ধরনের মন্দা আসতে পারে না। বর্তমান বিশ্বে সুদমুক্ত ইসলামী ব্যাংকগুলোই তূলনামূলক ভাবে মন্দার দেখা কম পেয়েছে।

গত ১৫ই ফেব্রুয়ারী ২০০৯ ‘বসুন্ধরা ইসলামিক রিসার্চ সেন্টারের’ বিশ বছর পূর্তি উপলক্ষে আলিম-উলামাদের জন্য আয়োজিত ‘ইসলামী ব্যাংকিং ও অর্থনীতি’ বিষয়ক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে পাকিস্তানের সুপ্রিমকোর্টের শরিয়াহ আপিলেট বেঞ্চের সাবেক বিচারপতি, ওআইসির ইসলামি ফিকাহ একাডেমির স্থায়ী সদস্য, বিশিষ্ট ইসলামিক অর্থনীতিবিদ মুফতি তাকি উসমানি এ কথাগুলো বলেছেন।

এর আগে গত ১৪ই ফেব্রুয়ারী ২০০৯ ঢাকা শেরাটন হোটেলে আল আরাফা ইসলামী ব্যাংক, এক্সিম ব্যাংক, শাহজালাল ইসলামী ব্যাংক ও স্ট্যান্ডারড্ চাটার্ড ব্যাংকের শরীয়াহ বোর্ড কর্তৃক আয়োজিত ‘ইসলামী ব্যাংকিং ও অর্থনীতি’ বিষয়ক সেমিনারেও তিনি এ বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে তুলে ধরেন। সেখানে দেশের খ্যাতনামা তিন শতাধিক ব্যাংকার, শরীয়াহ স্কলার, প্রফেসর, বুদ্ধিজীবি ও ব্যবসায়ী উপস্থিত ছিলেন।

বসুন্ধরায় তাঁর প্রদত্ত বক্তব্যের সারকথাটুকু তুলে ধরার চেষ্টা করছি।

তিনি বলেন, আল্লাহ তায়ালা সুদের ব্যাপারে কুর’আন কারীমে বলেছেন,

يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا اتَّقُوا اللَّهَ وَذَرُوا مَا بَقِيَ مِنَ الرِّبَا إِنْ كُنْتُمْ مُؤْمِنِينَ - فَإِنْ لَمْ تَفْعَلُوا فَأْذَنُوا بِحَرْبٍ مِنَ اللَّهِ وَرَسُولِهِ ۖ وَإِنْ تُبْتُمْ فَلَكُمْ رُءُوسُ أَمْوَالِكُمْ لَا تَظْلِمُونَ وَلَا تُظْلَمُونَ

“হে ঈমানদারগণ,তোমরা আল্লাহকে ভয় কর এবং সুদের যে সমস্ত বকেয়া আছে,তা পরিত্যাগ কর,যদি তোমরা ঈমানদার হয়ে থাক। অতঃপর যদি তোমরা পরিত্যাগ না কর,তবে আল্লাহ্ ও তাঁর রাসূলের সাথে যুদ্ধ করতে প্রস্তুত হয়ে যাও”। (২:২৭৮-২৭৯)

আর কোনও পাপের ক্ষেত্রে এত ভয়াবহ ঘোষণা আল্লাহ দেননি। হাদীসে আছে,

الربا سبعون بابا أدناها كالذي يقع على أمه “সুদের প্রকার সত্তরটির মতো। সর্বনিম্নটির উদাহরণ ঐ ব্যক্তির মতো, যে তার নিজ মায়ের সাথে অপকর্ম করে”। (আত-তারগীব ওয়াত তারহীব, কিতাবুল বুয়ু:২৮৪৭, আলবানী বলেন: সহীহ লিগাইরিহী, সহীহুত তারগীব ওয়াত তারহীব লিল আলবানী:১৮৫৩)

বিগত পাঁচশ বছর ধরে এই ভয়াবহ পাপের মাঝে সারা বিশ্ব ডুবে আছে। ইহুদীদের চক্রান্তে তা সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে প্রবেশ করেছে। আজ কেউ এর বাইরে নয়। আর এর অর্থ এই দাঁড়ায় যে, পুরো পৃথিবী এখন আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের স. বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছে।

যুগে যুগে এই ভয়াবহ রোগটি মানুষকে এমন ভাবে আক্রান্ত করেছে যে, সোশালিজম বলুন আর অন্য যা-ই বলুন, কেউ এর থেকে বের হতে পারেনি।

এদিকে বিগত কয়েক শতাব্দী ধরে মুসলমানদের রাজনৈতিক ক্ষমতা না থাকায় তাদের জ্ঞান-আহরণ ও বিতরণ সব মসজিদ ও মাদ্রাসা কেন্দ্রিক হয়ে গেছে। গবেষণা-ফাতওয়া কেবল ইবাদাত সংশ্লিষ্ট বিষয়াবলীতেই হয়েছে। অথচ ইসলাম যে মানুষকে ইবাদাত ছাড়াও ‘মু’আমালাত তথা লেনদেন’ -এর ক্ষেত্রেও দিচ্ছে পর্যাপ্ত দিক নির্দেশনা, তার দিকে নজর দেওয়ার সুযোগই হয়নি, কিংবা বলা যায়, সুযোগ পাওয়াই যায়নি।

কিন্তু গত অর্ধশতাব্দী ধরে মুসলমান দেশগুলো ক্রমেই স্বাধীনতা লাভ করতে থাকলে, সে সময়, পারস্পারিক লেনদেন তথা মু’আমালাতকেও ইসলামীকরণের প্রয়োজন দেখা দেয়। যার ফলে মুসলিম দেশগুলোতে শুরু হয়ে যায় নতুন গবেষণা।

তবে এ ক্ষেত্রে সব চেয়ে বড় যে বাধাটি দাঁড়ায় তা হলো, সুদ। না, সুদ ছেড়ে বের হওয়া যাচ্ছিল না কোন ভাবেই। লেনদেনের সকল পর্যায়ে সুদ এমন ভাবে জাল বিস্তার করে রেখেছিল যে, তা থেকে বের হওয়া অসম্ভবই মনে হচ্ছিল।

ফলে একদল লোক তো বলেই উঠল, যে, ব্যাংকের সুদ আর প্রাচীন সুদের প্রেক্ষাপট এক নয়। প্রাচীন সুদ ছিল জমিদারী সুদের ন্যায়। যেখানে গ্রাহক ছিল দরিদ্র, আর দাতা ছিল ধনী। কিন্তু এখন প্রেক্ষাপট পাল্টেছে। গ্রাহক ও দাতা উভয়ে এখন ধনী। সুদ এখন আর কারও গলা চেপে ধরে না। অতএব এই সুদ সেই সুদ নয়। এই সুদ নির্ভেজাল, হালাল।

এ প্রেক্ষিতে আমার একটি ঘটনা মনে পড়ে গেল। এক ভিনদেশী গায়ক একবার হজ্জ্ব করতে গেল। তো হজ্জ্বের মাঝে তার দেখা হলো এক আরবী গায়কের সাথে। ভালোই ভাব জমলো উভয়ের মাঝে। এক রাতে সেই আরবী গায়ক ভিনদেশী গায়ককে গান শোনাতে চাইল। সেও রাজী হলো। আরবী গায়ক গান শোনাল। সেটা গান হয়েছিল কি না কে জানে, তবে গায়ক খুব মজা করেই গেয়ে যাচ্ছিল। কিন্তু শ্রোতা ভিনদেশি গায়কটা তাকে থামিয়ে বললো, থাম! এখন বুঝেছি কেন আরবের নবী মুহাম্মদ স. গান নিষিদ্ধ করেছিলেন! তোমাদের মতো সুকণ্ঠী ( ! ) গায়কদের গান শুনে বিরক্ত হয়েই তিনি এই সিদ্ধান্ত দিয়েছিলেন। আমার গান শুনলে নিশ্চয় তিনি এমন বলতেন না।

তো ব্যাপারটা এমনই। সুদ তখন এক প্রেক্ষিতে নিষিদ্ধ হয়েছে, এখন প্রেক্ষিত পাল্টেছে, তাই সুদও আর হারাম নয়, এটা তাদের দাবী। কিন্তু প্রেক্ষিত তো অনেক পাপের ক্ষেত্রেই পাল্টেছে, তাই বলে কি সে সব পাপই হালাল হয়ে যাবে? না, কখনও না।

আলহাম্দুলিল্লাহ উলামায়ে হক্ক্ব –এর আহ্বানে এই সমস্যা সমাধান হয়। জেদ্দায় ৪৩টি দেশের ফকীহগণ এ ব্যাপারে একমত হন যে, প্রাচীন সুদ আর বর্তমান সুদ এর মাঝে কোনও পার্থক্য নেই।

আমি যখন প্রথম লেখালেখি করতাম, তখন সবাই বলত,সুদের একটি বিকল্প বের কর।শুধু হারাম বলে দিলে মানুষকে বিরত রাখা যাবে না। এর একটি বৈধ বিকল্প লাগবে।

দেখুন, কিছু বিষয় আছে এমন যার কোন বিকল্প হতে পারে না। যেমন ধরুন, জুয়া। এর কোন বৈধ বিকল্প হতে পারে না। কারণ এর মূল উদ্দেশ্যই হারাম।

আবার কিছু বিষয় এমন যার বিকল্প হতে পারে, যার উদ্দেশ্য তো বৈধ, কিন্তু পন্থাটি অবৈধ। যেমন ব্যাংক ব্যবস্থা। এর উদ্দেশ্য তো ব্যবসা। আর তা হালাল। কিন্তু পন্থাটি সুদ ভিত্তিক। তাই তা অবৈধ।

দেখুন, ব্যবসার জন্য তো পুঁজি লাগেই। কিন্তু বর্তমান বাজারে একক পুঁজিতে ব্যবসা করা এক প্রকার অসম্ভব।

যেমন ধরুন, লোহার কথাই বলি। আল্লাহ কুরআন কারীমে লোহার কথা এভাবে বলেন,

وَأَنْزَلْنَا الْحَدِيدَ فِيهِ بَأْسٌ شَدِيدٌ وَمَنَافِعُ لِلنَّاسِ “আর আমি নাযিল করেছি লৌহ, যাতে আছে প্রচণ্ড রণশক্তি এবং মানুষের বহুবিধ উপকার”। (হাদীদ, ৫৭:২৫) সত্যিই, লোহা প্রতি যুগেই অত্যন্ত লাভজনক পণ্য হিসেবে বিবেচিত হয়েছে।

কিন্তু এ যুগে কেউ যদি লোহার কোন কারখানা দিতে চায়, তার একার পক্ষে তো সম্ভব হবেই না, বরং পুরো দেশ মিলেও একটা লোহার কারখানা দেওয়া কঠিন হয়ে যায়। তাই স্বভাবতই এখন হাজার মানুষের পুঁজিকে পুঁজি করে ব্যবসা করার কনসেপ্ট এসেছে।

আবার ঘরে অর্থ জমিয়ে রাখাও ইসলামের মেজাজ নয়। দেখুন আল্লাহ তায়ালা বলছেন,

وَالَّذِينَ يَكْنِزُونَ الذَّهَبَ وَالْفِضَّةَ وَلَا يُنْفِقُونَهَا فِي سَبِيلِ اللَّهِ فَبَشِّرْهُمْ بِعَذَابٍ أَلِيمٍ

“আর যারা স্বর্ণ ও রূপা (ধন সম্পদ) জমা করে রাখে এবং তা ব্যয় করে না আল্লাহর পথে,তাদের মর্মন্তুদ শাস্তির সুসংবাদ দাও”। (৯:৩৪)

كَيْ لَا يَكُونَ دُولَةً بَيْنَ الْأَغْنِيَاءِ مِنْكُمْ “যাতে সম্পদ তোমাদের ধনীদের হাতে পুঞ্জিভূত না হয়ে পড়ে। (৫৯:৭)

অতএব ব্যবসা করার জন্য ব্যাংক ব্যবস্থা হতেই পারে, এর প্রয়োজন আছেই। কিন্তু এর পন্থাটায় ত্রুটি ছিল। সেটি সুদযুক্ত হওয়ায় এর বৈধ বিকল্প বের করা উলামায়ে কিরামের দায়িত্ব ছিল।

সে লক্ষ্যে মুফতী শফী, মাওলানা ইউসুফ বিন্নুরী প্রমুখ নিরলস চেষ্টা করে গিয়েছেন। ১৯৭৭ এর দিকে সর্বপ্রথম একটি ইসলামী কাউন্সিল গঠিত হয়, যার মাধ্যমে সুদমুক্ত ব্যাংকিং ব্যবস্থা প্রবর্তনের চেষ্টা শুরু হয়। এরপর দারুল উলুমে ‘মাজলিসে তাহকীকে মাসায়েলে হাজেরা’ নামে একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। যার প্রেক্ষিতে পরবর্তীকালে কয়েকটি সংস্থা প্রতিষ্ঠা লাভ করে, যাদের কাজ ছিল সুদমুক্ত ব্যাংকিং ব্যবস্থা প্রবর্তনের জন্য সবরকম চেষ্টা চালিয়ে যাওয়া।

আলহামদুলিল্লাহ, বর্তমানে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে আমরা সুদমুক্ত ব্যাংকিং ব্যবস্থার জন্য কাজ করে যাচ্ছি। আমি সাধারণত মুদারাবা ও শিরকত পদ্ধতিতে লেনদেন করতেই ব্যাংকগুলোকে বেশি পরামর্শ দিয়ে থাকি। অন্য পদ্ধতিতেও লেনদেন হতে পারে, আমি সেগুলোকে নাজায়েয বলি না, যদিও কেউ কেউ ভুল বুঝে তা মনে করে।

তবে এ ব্যাংকিং ব্যবস্থার ক্ষেত্রে অবশ্যই লক্ষ্য রাখতে হবে যে, ইসলামে নির্দেশিত ‘বাঈ’ তথা কেনা-বেচার সব শর্ত যেন ঠিকমতো পাওয়া যায়। যেমন, মালিকানা > হস্তগত হওয়া > বিক্রয় করা। এর কোনটি যদি অনুপস্থিত থাকে তা হলে নিঃসন্দেহে তা অবৈধ হবে। যেমন মালিকানা না থাকলে ‘রিবহে মা লা ইয়াজমান’ আবশ্যক হয়, যা সুস্পষ্ট হারাম।

বর্তমান বিশ্বে যে অর্থনৈতিক মন্দা চলছে, তা তিন কারণে হচ্ছে।

১. بيع الدين বা ঋণের বিনিময়ে বিক্রয়

২. بيع ما لا يملك বা মালিকানাহীন বস্তুর বিক্রয়

৩. بيع ما لم يقبض বা যা হস্তগত নয় তার বিক্রয়

তিনোটাই হারাম। আর হারামের অনিবার্য পরিণতি হলো ক্ষতি; মন্দা।

পশ্চিমের পত্রিকাগুলোতে প্রায় প্রতিদিনই আর্টকেল ছাপা হয়, যে, ইসলামী ব্যাংগুলোতে মন্দার ছোঁয়া কম লেগেছে। নতুন নতুন ব্যাংকও এখন ইসলামী শাখা খুলতে সচেষ্ট হচ্ছে। এদিকে কিছু কিছু পত্রিকা আবার আমাকে জঙ্গি উপাধি দিচ্ছে। আমি না কি তাদের ব্যবসা বন্ধ করে দিচ্ছি, তাই আমাকে দমন করার জন্য এ কৌশল।

অতএব, প্রিয় ভাইয়েরা!

ইসলামী ব্যাংকিংয়ের এ ব্যবস্থাটি বুঝুন। এতে ভুল থাকলে, তা কিছু থাকবেই, সংশোধনের জন্য চেষ্টা করুন। যত দিন না এতে যোগ্য লোকেরা অধিক সংখ্যায় যোগ দিচ্ছেন, ততদিন তা সম্পূর্ণ রূপে সঠিক কিভাবে হবে! কোন কিছু খারাপ মনে হলে পিছু না হটে তা শুধরানোর চেষ্টা করুন। আমাদের গোটা কয়েকজনের প্রচেষ্টায় তো শত শত বছরের ব্যবস্থা পাল্টে যাবে না। পাচ শ’ বছরের ব্যবস্থা পাল্টাতে তো কিছু সময় লাগবেই।

এরপর শুরু হয় প্রশ্নোত্তর পর্ব:

প্র: কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সাথে ইসলামী ব্যাংকগুলোর লেনদেন কীভাবে হয়ে থাকে? সুদী লেনদেন হলে তো ইসলামী ব্যাংকগুলো সুদমুক্ত নয়। এ অবস্থায় লেনদেন করাটা কতটুকু হালাল হবে?

উ: আপনাদের দেশের অবস্থা তো জানি না। আমাদের দেশে ইসলামী ব্যাংকগুলোর সাথে লেনদেনের জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংকে আলাদা বিভাগ আছে। যেখানে সুদমুক্ত লেনদেন হয়। অতএব তা হালাল হবে। (তখন ‘বসুন্ধরা ইসলামিক রিসার্চ সেন্টারের’ পরিচালক মুফতী আব্দুর রহমান বললেন যে, আমাদের দেশেও এ রকম ব্যবস্থা করার জন্য আমরা আবেদন জানিয়েছি। কেন্দ্রীয় ব্যাংকও ব্যাপারটা নিয়ে ভাবছে। আশা করি শীঘ্রই এ নিয়ে তারা সুন্দর পদক্ষেপ নিবেন।)

প্র: ইসলামী বীমাগুলোর ব্যাপারে আপনার কী মত?

উ: মালয়েশিয়ায় যে ইসলামী বীমা আমি দেখেছি, তা আমার মতে হালাল নয়। আমি সেটা তাদের বলেছি। অবশ্য সাউদীতে অনেকটা হালাল ভাবে কার্যক্রম শুরু হয়েছে। এ দেশের অবস্থা আমার জানা নেই।

প্র: আজ ১৫ই ফেব্রুয়ারী আমাদের দেশের একটি জাতীয় দৈনিক ‘আমার দেশ’ –এ খবর এসেছে যে, আপনি বলেছেন, যে, এদেশের ইসলামী ব্যাংকগুলোর লেনদেন ১০০% হালাল। আপনি কি আসলেই তা বলেছেন?

উ: না। কখনো নয়। আমি কোন ব্যাংকের ব্যাপারেই এ ধরনের ঢালাও মন্তব্য করি না। যেসব ব্যাংকের শরীয়াহ বোর্ডে আমি আছি, সেগুলোর ব্যাপারেই কেবল আমি সুনির্দিষ্ট মতামত জানাই, যেহেতু তাদের ব্যাপারে আমি জানি। আর বাকীগুলোর ক্ষেত্রে আমি বলি যে, যদি সেগুলো ইসলামী শর্ত মেনে পরিচালিত হয়, তবে হালাল। নতুবা হারাম।

আজকাল অনেক ইসলামী ব্যাংক-ই সুকৌশলে ইসলামী শর্তগুলো উপেক্ষা করে যাচ্ছে। আমি তাদের সুস্পষ্ট ভাবেই বলে দিই যে, তারা হারাম কাজ করে মানুষকে ধোকা দিচ্ছে। তবে এ জন্য আপনাদেরও এগিয়ে আসা প্রয়োজন। আপনি দেখবেন যে, এ দেশে এবং পৃথিবীর প্রায় সব দেশেই ইসলামী ব্যাংকগুলোর শরীয়াহ বোর্ডের অধিকাংশ সদস্যই এমন যারা ইসলামী ব্যাংকিং ও অর্থনীতি সম্বন্ধে গভীর পান্ডিত্য রাখেন না। তারা মনে করেন যে, প্রচলিত ব্যাংকিং ব্যবস্থাকে একটু ঘুরিয়ে করলেই ইসলামী ব্যাংকিং হয়ে গেল। ব্যাপারটা কিন্তু তা নয়। বরং ইসলামী ব্যাংকিংয়ের জন্য রয়েছে সুনির্দিষ্ট নীতিমালা, যেগুলো সঠিক ভাবে প্রয়োগের জন্য আপনাদের অংশগ্রহণ অধিকহারে কাম্য।

(উল্লেখ্য যে, ‘আমার দেশ’ –এর খবরটিতে সামান্য বিভ্রান্তি আছে। তবু সেখানে কিন্তু কেবল আমাদের দেশের ইসলামী ব্যাংকগুলোর কথা বলা হয়নি। অতএব প্রশ্নকর্তাও বিভ্রান্তিমূলক প্রশ্ন করেছেন। 'আমার দেশের' নিউজটি পড়ুন এখানে। )

এরপর তিনি আরও কিছু প্রশ্নের উত্তর দেন। সবশেষে আলিম উলামাদেরকে বৃহত্তর পরিসরে ইসলামী অর্থনীতি নিয়ে পড়া ও গবেষণা করার উপর গুরুত্বারোপ করেন। বিশেষ করে মাদ্রাসাগুলোর সিলেবাসে ইসলামী অর্থনীতি ব্যাপকভাবে অন্তর্ভুক্ত করার আবেদন জানান।

(পাঠকবৃন্দ, ইসলামী ব্যাংকিং ব্যবস্থা সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে মুফতি তাকি উসমানির অর্থনীতি বিষয়ক বইগুলোর অনুবাদ গ্রন্থগুলো পড়তে পারেন। এ ছাড়া আমার শ্রদ্ধেয় শিক্ষক মাওলানা আবুল ফাতাহ মুহাম্মদ ইয়াহইয়া সাহেবের ‘ইসলামী অর্থনীতির আধুনিক রূপায়ণ’ পড়ে নিতে পারেন। বইগুলো যে কোন ইসলামিক লাইব্রেরীতেই পাওয়া যেতে পারে।)

--------------------
১৮ই ফেব্রুয়ারী ২০০৯

2 comments:

Anis July 18, 2009 at 2:26 AM  

Assalamualaikum

Thanks a lot for this important informations.

From my personal experience, I saw, (some) Officers of Standard Charted Bank discourage people about Islami (may be Mudaraba) loan. They says, "It's actually the traditional loan system with some hassle. I'll not suggest this complex process."

Whoever can, please forward their attitude to proper authority.

Yousuf July 22, 2009 at 11:30 AM  

Walaikum Assalam.

You r welcome Mr. Anis and a special Thanks for ur comment.

Mawlana Taqi Usmani has blamed those who cannot differ between the traditional and Islamic process. I, myself, used to think the same way. But after hearing him, I have no doubt Alhamdulillah.

Yeah! its true that the Islamic Banks in our country have not yet been successful in applying all the Islamic procedures, but yet they r trying to.. And this much should be appreciated too.. We should not dishonor their effort. Insha'Allah soon they will be able to apply Islam completely in all their banking processes.

Thanks again.

Post a Comment

Welcome



Dear visitor, Please visit my new site: http://yousufsultan.com/