মৃত্যু: দরজার ওপাশেই দাঁড়িয়ে..

যুদ্ধবিদ্ধস্ত দেশের মানুষের আচরণ, কথাবার্তা কেমন হয় কে জানে! তাদের দিনটা কীভাবে কাটে, রাতটা কীভাবে শেষ হয়; তাদের শিশুরা কীভাবে হাসে, কীভাবে কাঁদে; তাদের চিন্তা-চেতনা, মানসিকতায় কী রকম প্রভাব পড়ে –এসব কল্পনাও করতে পারি না। পারি না বললে বোধহয় ভুল হচ্ছে, বলি, পারতাম না।

প্রতিদিন পত্রিকাগুলোতে খবর পড়তাম, “এতজন শিশু মারা গেছে; এতজন আহত হয়েছে” ইত্যাদি ইত্যাদি। মনটা কখনো কাঁদত, আবার কখনো কোনো প্রতিক্রিয়াই হতো না। যে খবরটা দৈনিকই পড়ছি, শুনছি, তাতে কোনো প্রতিক্রিয়া হওয়ার কথাও নয়। এসব খবর মন যেন সয়ে নেয়। মিছিল-মিটিং, নিন্দা জানানো, শোক প্রকাশ -যা হয়, প্রথম দিকে হয়। এরপর সব কষ্ট হারিয়ে যায়, না, বলি, বিদায় নেয়।

আমার প্রিয় জন্মভূমিতে গত ক’দিনে ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলো আমাকে সব বুঝিয়ে দিয়েছে। যুদ্ধ হয় নি তবু যুদ্ধের স্বাদ ( ! ) পাইয়েছে। আতঙ্কের মাঝে কীভাবে হাসতে হয়, কীভাবে কাঁদতে হয়, শিখিয়েছে। আমি বুঝেছি তাদের কষ্ট, যারা সারা বছরই এর চেয়েও ভয়াবহ যুদ্ধের মাঝে দিনাতিপাত করছে। যারা প্রতিটি মুহূর্তে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে।

মাত্র দু’দিনের ঘটনা, অথচ... কে ভালো, কে খারাপ; কে ঠিক করেছে, কে ভুল করেছে; তা জানি না, জানতে চাইও না। শুধু জানি, ‘ওরা’ আমার দেশের বড় ক্ষতি করে ফেলেছে। এই ‘ওরা’ কারা, তা-ও জানি না। জানি না তা কখনো জানতে পারব কি না।

আজ আমার এই লেখার উদ্দেশ্য কোন বিচার-বিশ্লেষণ করা নয়। আমি শুধু আল্লাহ তায়ালার তিনটি বাণী স্মরণ করিয়ে দিতে চাচ্ছি। তিনি বলেন,

১. তোমরা যেখানেই থাক না কেন, মৃত্যু কিন্তু তোমাদেরকে পাকড়াও করবেই- যদি তোমরা সুদৃঢ় দুর্গের ভেতরেও অবস্থান কর,তবুও। (নিসা:৭৮)

২. বলুন,তোমরা যে মৃত্যু থেকে পলায়নপর, সেই মৃত্যু অবশ্যই তোমাদের মুখামুখি হবে, অতঃপর তোমরা অদৃশ্য ও দৃশ্যের জ্ঞানী আল্লাহর কাছে উপস্থিত হবে। তিনি তোমাদেরকে জানিয়ে দিবেন সেসব কর্ম,যা তোমরা করতে। (জুমুয়া:৮)

৩. প্রত্যেককে মৃত্যুর স্বাদ আস্বাদন করতে হবে। আমি তোমাদেরকে মন্দ ও ভালো দ্বারা পরীক্ষা করে থাকি এবং আমারই কাছে তোমরা প্রত্যাবর্তিত হবে। (আম্বিয়া:৩৫)

মৃত্যু আমাদের জন্য অবধারিত। আমাদের ঘরের দরজায়ই সে উপস্থিত। যে কোনো সময়ে, যে কোনো ক্ষণে কিছু না বলেই হঠাৎ সে ঢুকে পড়বে। বিশেষ করে বর্তমান পরিস্থিতিতে তা সহজেই বুঝা যায়।

অতএব সে ক্ষণটির জন্য সদা প্রস্তুত থাকতে হবে। আল্লাহর বিধানগুলো মেনে চলে তাঁর কাছে ক্ষমা চাইতে হবে, দু’আ করতে হবে। অন্যায়, অপরাধ পরিহার করতে হবে। মনে রাখতে হবে, মৃত্যু পরবর্তী জীবনই চিরস্থায়ী, আর পৃথিবীর এ জীবন ক্ষণস্থায়ী।

আমরা মৃত্যু ও মৃত্যু পরবর্তী জীবনের জন্য নিজেদের যেভাবে প্রস্তুত করতে পারি:

১. কুরআন ও হাদীস বেশি বেশি পড়ে নিজেদের ঈমানকে (বিশ্বাস) মজবুত করে।
২. পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ ঠিক মতো আদায় করে।
৩. যাকাত ঠিক মতো আদায় করে।
৪. যে কোনো প্রকার অন্যায়/অপরাধ/গোনাহের কাজ পরিহার করে।
৫. কোনো গোনাহ হয়ে গেলে সঙ্গে সঙ্গে আল্লাহর কাছে অনুনয়-বিনয় করে অনুতপ্ত হৃদয়ে ক্ষমা প্রার্থনা করে।
৬. কাউকে কোনো রকম কষ্ট না দিয়ে।
৭. কারো অধিকার/হক ক্ষুন্ন না করে।
৮. মা-বাবার দু’আ নিয়ে, তাদের সেবা করে।
৯. মৃত্যুর পর দু’আ করবে এমন সন্তান রেখে গিয়ে।
১০. মৃত্যুর পরও সওয়াব পাওয়া যাবে –এ ধরনের জনসেবামূলক/সাদাকায়ে জারিয়া করে।

ইত্যাদি ইত্যাদি। এক কথায় বলা যায়, আল্লাহর বিধি-নিষেধগুলো সঠিকভাবে মেনে চলে। আল্লাহ আমাদের মৃত্যু পরবর্তী জীবনের জন্য সর্বোত্তম প্রস্তুতি গ্রহণের তাওফীক দিন। আমীন।

----------------------
৬ই মার্চ ২০০৯, প্রথম আলো ব্লগ

0 comments:

Post a Comment

Welcome



Dear visitor, Please visit my new site: http://yousufsultan.com/